জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে হয় ?

জলবায়ু পরিবর্তন কি?

আজ বৃষ্টি হচ্ছে, কাল রোদ হতে পারে – বায়ুমণ্ডলের এ জাতীয় পরিবর্তনগুলি যা আমরা দিনের পর দিন দেখি এবং অনুভব করি তাই হল আবহাওয়া । জলবায়ু একটি জায়গার গড় আবহাওয়া যা বিভিন্ন ঋতুতে আলাদা হতে পারে। গ্রীষ্মে একটি জায়গা বেশিরভাগ সময় উষ্ণ এবং ভিজা হতে পারে। একই জায়গায় শীতে শীতল এবং শুকনো হতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জলবায়ু থাকতে পারে। বিশ্বের সমস্ত আবহাওয়াকে একত্রিত করলে যা পাই তা হ’ল পৃথিবীর জলবায়ু ।

কোন স্থানে সাধারণত বছরে কত বৃষ্টিপাত হয় তার কিংবা স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রায় পরিবর্তনই হল জলবায়ু পরিবর্তন । অর্থাৎ এটি একটি জায়গার স্বাভাবিক আবহাওয়ার পরিবর্তন। আবহাওয়া মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন হতে কয়েকশো বা লক্ষ বছর সময় লাগে ।

পৃথিবীর জলবায়ু সর্বদা কিন্তু ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। এমন অনেক সময় ছিল যখন পৃথিবীর জলবায়ু এখনকার চেয়ে উষ্ণ ছিল। আবার এটি বেশ শীতলও ছিল কোন অতীতে । আর শীতল ও উষ্ণ জলবায়ু হাজার হাজার বা কয়েক লক্ষ বছর স্থায়ী হতে পারে। অনেক কিছুই প্রাকৃতিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী হতে পারেঃ সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব পরিবর্তন কিংবা সূর্যের প্রেরিত শক্তির তারতম্য অথবা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ।

জলবায়ুতে প্রাকৃতিক যে ওঠানামা রয়েছে, প্রধানত তাপমাত্রা এখন অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে দ্রুত বাড়ছে। গত ১০০ বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রার এ পরিবর্তন খুব বেশি মনে নাও হতে পারে কিন্তু এটি বড় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে । যেমন ধরুন পশ্চিম ইউরোপে সাম্প্রতিক মুষলধারে বৃষ্টিপাত ও বন্যা, উত্তর আমেরিকার তাপদাহ এবং দাবানল, আফ্রিকার খরা, বঙ্গোপসাগরসহ অন্নান্য পৃথিবীর উপকুলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্তটা এ সবের সঙ্গে রয়েছে দুনিয়ার উষ্ণতা বাড়ার সম্পর্ক ।

জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে হয়?

পৃথিবীর জলবায়ু বিজ্ঞান জটিল তবে সাধারনভাবে বুঝাটা কঠিন কিছু না । যখন সূর্য থেকে আগত শক্তি পৃথিবী থেকে (মুলত মেঘ এবং বরফ দ্বারা) প্রতিফলিত হয়ে মহাকাশে ফিরে যায় অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল যদি তাপ ছেড়ে দেয়, তখন পৃথিবী শীতল হয়। অন্যদিকে যখন পৃথিবী সূর্যের শক্তি শোষণ করে এবং বায়ুমণ্ডলীয় (জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন যেগুলো গ্রিনহাউস বলে পরিচিত) গ্যাসগুলি যখন পৃথিবী থেকে মুক্ত হওয়া তাপকে মহাকাশে বিকিরণে বাধা দেয়, তখন পৃথিবী উষ্ণ হয়। বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসগুলি পৃথিবীকে উষ্ণ রাখতে ইনসুলেশনের বা অন্তরণের মতো কাজ করে যা গ্রিনহাউস ইফেক্ট বলে পরিচিত, আর যদি তা না হতো তবে পৃথিবী হিমায়িত বরফের বলে পরিনত হত । কিন্তু যত বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে, পৃথিবী তত উষ্ণ হতে শুরু করবে, আর এটাই এখনকার সমস্যা ।

যদিও নিখুঁত সাদৃশ্য নয়, তবুও ধরুন পৃথিবী আপনার গাড়ির মতো । রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সম্ভবত লক্ষ্য করেছেন যে আপনার গাড়িটি বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ভিতরে সবসময় বেশি গরম থাকে । এর কারন গাড়ির জানালা দিয়ে সূর্যের রশ্মি প্রবেশ করে, এই প্রক্রিয়ায় কিছু তাপ সিট, ড্যাশবোর্ড এবং মেঝের ম্যাট দ্বারা শোষিত হয়। যখন এই বস্তুগুলি এই তাপটি ছেড়ে দেয়, তখন সমস্ত অংশ জানালা দিয়ে বের হয় না, কিছু প্রতিফলিত হয়ে থেকে যায় গাড়ির ভিতর । ফলস্বরূপ আপনার গাড়ির ভিতরের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীর গ্রিনহাউস ইফেক্ট গাড়ির গরম হওয়ার চেয়ে একটু জটিল কিন্তু এটি ব্যাপারটা অনুধাবনের একটি উদাহরন হতে পারে ।

জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে হয় – তার একটি সহজ ব্যাখ্যা ।

লোকজন গাড়ি চালায়, শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করে ঘর গরম করে কিংবা শীতল রাখে, খাবার রান্না করে – এই সমস্ত জিনিস যে শক্তি ব্যায় করে তা মুলত আসে কয়লা, তেল এবং গ্যাস থেকে । এই গুলির ব্যবহার বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড অর্থাৎ গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমান বড়াচ্ছে যা বিকরিত তাপকে প্রতিফলিত করে ক্রমান্বয়ে পৃথিবী কে উষ্ণ করে তুলছে । শুধু খনিজ জ্বালানিই নয়, রয়েছে আরো কিছু কারন । যেমনঃ গাছপালা কার্বন সংরক্ষণ করে রাখে। ফলে, বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়।

প্রকৃতি এবং মানুষ উভয়ই পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনকে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক জলবায়ুর কিছু পরিবর্তনের সাথে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডজনিত মাত্রাতিরিক্ত গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ব্যাপারটি যা জলবায়ু পরিবর্তনকে খুব বেশি পরিমাণে ত্বরান্বিত করছে ।

মানুষ যখন থেকে কল-কারখানা শুরু করলো সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কে?

সবাই । তবে অর্থনৈতিকভাবে ধনী দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী কেননা তাদের শিল্প কারখানা বেশি, দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি । গত ২০১৮ সালের হিসাব মতে পৃথিবীর সমস্থ (৪০৬ পিপিএম) কার্বন ডাই অক্সাইডের ৫০% -ই নির্গমন করেছে চায়না, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্ডিয়া ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সম্মিলিতভাবে । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, যাদের গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনে অবদান কম তাঁরাই জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাবের শিকার হবে বেশি ।

জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধে আমি কি করতে পারি?

  • পৃথিবী সম্পর্কে যত বেশি জানবেন, জলবায়ুর সমস্যা সমাধানে আপনি তত বেশি সহায়তা করতে পারেন।
  • জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নিতি নির্ধারন ও তার প্রয়োজনীয় প্রয়োগই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে ।
  • ব্যক্তিগতভাবে আপনি কম বিদ্যুৎ এবং জল ব্যবহার করে সহায়তা করতে পারেন। যেমন ধরনঃ আপনি যখন কোনও ঘর ছাড়েন তখন লাইট বন্ধ করুন। দাঁত ব্রাশ করার সময় জল বন্ধ করুন।  একাজগুলো সবাই করলে সার্বিক ফলাফল হবে ব্যাপক ।

ফিচার ফটোঃ NASA ও BBC অবলম্বনে

লেখকঃ মোহ বাঙ্গালি

About সময় চাকা

আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশী। সময়ের চাকায় আমরা চলেছি সুখের সন্ধানে, সেই প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে আজও চলছে সন্ধান আর অনুসন্ধান । তাই চলুন সময়ের চাকায় পিষ্ট না হয়ে, সময় চাকা ধরে চলতে থাকি, সময়কে সুন্দর করে রাখার আশায়…

One thought on “জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে হয় ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *