কিভাবে ফেসবুক, টুইটার কিংবা যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ব্যাবহার নিয়ন্ত্রন করবেন?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মানুষের মনকে খুব ভালভাবে বুঝে আর জানে কিভাবে মানুষকে দিয়ে নতুন অভ্যাস তৈরি করাতে হবে । অভ্যাস হলো প্রবৃত্তি তাড়িত দ্রুত, পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ যা সামান্য বা কোন সচেতন চিন্তাধারা ছাড়াই সম্পন্ন হয় । সফল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারকারীর আচরণকে চার ধাপের (ট্রিগার, অ্যাকশন, রিওয়ার্ড এবং বিনিয়োগ) একটি প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে অভ্যাসে পরিণত করে । আর কোনরকম ব্যয়বহুল বিজ্ঞাপন ছাড়াই তারা ব্যবহারকারীদের বারবার তাদের প্লাটফর্মে ফিরিয়ে আনতে অনুপ্রাণিত করে।

মূলতঃ তারা একটি ট্রিগার অর্থাৎ উদ্দীপনা কিংবা আবেগপূর্ণ কিছু ঘটার প্রত্যাশা তৈরি করে । এরপর আসে উদ্দীপনায় সাড়া দেয়ার কর্ম যেখানে রয়েছে অননুমেয় কিছু সুখকর অনুভুতির অর্থাৎ রিওয়ার্ড পাবার সম্ভাবনা । আর ব্যবহারকারী এসব প্লাটফর্মে বন্ধুর পোস্টে কমেট, ভ্রমনের ছবি শেয়ারসহ যত বেশি সময় দিবে ততই স্মৃতিময় ডাটার বিনিয়োগ বাড়বে আর তৈরিও হবে নতুন উদ্দীপনা যা তাকে বারবার ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত করবে ।

সফল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারকারীর আচরণকে চার ধাপের (ট্রিগার, অ্যাকশন, রিওয়ার্ড এবং বিনিয়োগ) একটি প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে অভ্যাসে পরিণত করে ।  ফেসবুক কিভাবে এটি করে তাও এখানে দেখতে পারেন ।

আসুন একটা দৃশ্য কল্পনা করি (এবং দেখতে পারেন সংযুক্ত চিত্রটিও)

(১) আপনার মন খারাপ বসে আছেন, তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই । হঠাৎ একটা নোটিফিকেশনের শব্দ ভেসে আসলো হাতের কাছে থাকা পাশের টেবিলে রাখা মোবাইল থেকে । তেমন কিছু চিন্তা না করেই মোবাইলটা হাতে নিলেন এবং লক স্ক্রীন টা খুলে দেখলেন আপনার ফেসবুক অ্যাপের উপরে একটা ছোট্ট লাল গোলের ভিতরে ৭ লেখা ।

কোন সচেতন চিন্তাধারা ছাড়াই খারাপ লাগা থেকে পালানোর জন্য ঐ উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে…

(২) টিপ মেরে খুলে ফেললেন ফেসবুক অ্যাপটি । আর ব্যাবহারকারীর অনুপ্রেরণা বাড়ানর জন্য এগুলোর ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে আপনার বাড়তি কোন দক্ষতার প্রয়োজন না হয় এবং প্রশিক্ষন ছাড়াই ব্যবহার করতে পারেন । 

(৩) অ্যাপস খুলে দেখলেন আপনার কিছুক্ষণ আগে শেয়ার করা ছবিতে ৫০ টি লাইক, বন্ধুর নতুন ছবি, পুরাতন বন্ধুর নিমন্ত্রণ এইসব অননুমেয় পুরস্কারে আপনার মন ভাল হয়ে গেল ।

 (৪) তৎক্ষণাৎ শুরু করলেন আরেকটু ব্রাউজ করা, দিলেন অনেকগুলা লাইক । লিখলেন অনেকগুলা কমেন্ট, আর বাড়তে থাকল আপনার বিনিয়োগ ।

পরবর্তীতে আবারও পেতে শুরু করলেন নোটিফিকেশন, আর এভাবেই আবার শুরু হবে চার ধাপের প্রক্রিয়াটি আর সচেতন না হলে আপনি হয়ে যেতে পারেন আসক্ত ।

কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে যদি উদ্বিগ্ন হন তবে ব্যাবহারের সময় নিয়ন্ত্রন করে আসক্তি কমিয়ে আনা যায় । নোটিফিকেশনের শব্দ, এমনকি অ্যাপের উপরে ছোট্ট লাল গোল নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন কেননা এটি আপনাকে লগ-ইন করার উদ্দীপনা দেয় । কে কখন কী করল, কে কোথায় লাইক দিল, কখন কী কমেন্ট করল তা আপনি আপনার সময়মত জানবেন, কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাতে নয়।

বন্ধু-পরিচিতদের সাথে সংযুক্ত ও সুসম্পর্ক বজায় রাখাসহ দৈনন্দিন জীবনের কর্মকান্ডে নানাভাবে সাহায্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারের উপকারিতা খুবই স্পষ্ট। আর এই সুফলের জন্য দরকার উদ্দীপনা হ্রাস করে সময় নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার । উদ্দীপনা নিয়ন্ত্রনই মোক্ষ ।

সুত্রঃ Hooked: How to Build Habit-Forming Products by Nir Eyal

লেখকঃ মোহ বাঙ্গালি

ফিচার ফটোঃ pixabay.com

About সময় চাকা

আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশী। সময়ের চাকায় আমরা চলেছি সুখের সন্ধানে, সেই প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে আজও চলছে সন্ধান আর অনুসন্ধান । তাই চলুন সময়ের চাকায় পিষ্ট না হয়ে, সময় চাকা ধরে চলতে থাকি, সময়কে সুন্দর করে রাখার আশায়…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *